সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
ইউনিভার্সেল নিউজ : সেই বাড়িটিতে এখন কেউ নেই। বাড়ির মালিক ধর্ষক হিটু শেখ, তার স্ত্রী জাবেদা বেগম, দুই ছেলে সজীব শেখ, রাতুল শেখ সবাই কারাগারে। মাগুরার জারিয়া গ্রামের সবার মুখে মুখে একটাই দাবি, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি’, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি’। শিশুটির ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বাবা কিছুই বলতে পরছেন না। বুক চাপড়ে কাঁদছেন ভাইবোনসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
ধর্ষণের ক্ষত নিয়ে শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের মাতম চলছে। অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ধর্ষণের ঘটনায় নিহত শিশুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এশার নামাজের পর জানাজা শেষে নিজ আদি নিবাস শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডীতে তাকে দাফন করা হয়। গোটা কবরস্থানের আশপাশ শিশুটির স্বজনসহ গ্রামবাসীর কান্নার শব্দে ভারি হয়ে উঠেছে। এর আগে তার মরদেহ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মাগুরায় পৌঁছায়।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। সেই খবরে সারা দেশে তৈরি হয় ক্ষোভ। এ ঘটনায় শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে ৭ মার্চ রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ৮ মার্চ শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বেলা একটায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।
সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ দুপুরে বলেন, আজ সকালে দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তাঁর হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তার আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। বেলা একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রগুলোর ভাষ্য, মাগুরায় ধর্ষণের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। শহরের নোমানী ময়দানে জানাজা শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ওই বাড়িটিতে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
মাগুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার রিপন হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে জানতে পারি হিটু শেখের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমরা অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেও মাঝপথে গ্রামের বিক্ষুব্ধরা আমাদের গতিরোধ করলে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। ফলে বাড়িতে এখনও আগুন জ্বলছে।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর পুলিশ কয়েক দফা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধদের প্রতিরোধের মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষের জানমালের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখছি আমরা। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। ওই বাড়িতে কেউ নেই।’
© All rights reserved ©2022-2025 universalnews24.comDesign By Ahmed Jalal.
Leave a Reply