বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন
বরিশালে এখন সাংবাদিকতা মানে দপ্তরের বারান্দায় চা আর কমিশন। কখনো আবার সাংবাদিক সম্মেলনের নাম করে ঘুষের ভাগবাটোয়ারা। সংবাদকর্মী না হয়েও বনে যান সাংবাদিক নেতা। আর যারা সাহস করে সত্য লেখেন তাদের নামে “অনুমোদনহীন নিউজ পোর্টাল” বলে মামলা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বরিশাল প্রেসক্লাবে ‘অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ অ্যাকশন কমিটি’ গঠনের ঘোষণায় পুরোনো মঞ্চ নাটকের কথা মনে পড়ল। চোর ধরতে পুলিশ, পুলিশ ধরতে চোর”। যেখানে সবাই জানে অফিসে গিয়ে ফাইল আটকে রেখে ফায়দা তোলা সাংবাদিকরা এখন সিনিয়র। আর যারা প্রতিবাদে কলম তোলে তারা নাকি ‘বিতর্কিত’। তাদের মুখে এখন “সততার প্রতিরোধ” শব্দটা শুনে হাসি পায়। যেন গরুর গলায় ঘণ্টা বেঁধে বলছে, আমি বাঘ ধরতে যাচ্ছি!
গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বরিশাল প্রেসক্লাবের সভায় ১৫ সাংবাদিক সংগঠনের এক জরুরি বৈঠক হয়। সভাপতি অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরুর নেতৃত্বে সৎ সাংবাদিকদের আত্মসমালোচনামূলক আহাজারি আর আত্মরক্ষার আর্জি শোনা গেল। বিবৃতি এল- অখ্যাত পত্রিকা, অনুমোদনহীন অনলাইন, কথিত টিভি সব বন্ধ করতে হবে। শুনে মনে হলো, “বাঘ মারতে গিয়ে বনপোড়া! কারণ, বাঘ এখন প্রেসক্লাবেই হরহামেশা ঘোরে!
নেতৃবৃন্দ বললেন, গভীর রাতে প্রেস লেখা বাইকে ঘুরে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা তোলে কিছু তথাকথিত সাংবাদিক। ঠিকই বলেছেন! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এই মোটরসাইকেলগুলো কে রাস্তায় নামতে দিলো? এই ফেসবুক টিভিগুলোর বুম কে উদ্বোধন করলো? যেখানে সরকারি দপ্তরের কিছু কর্মকর্তা নিজের নাম লুকিয়ে সাংবাদিক সেজে চুক্তি নেয়, যেখানে কিছু বড় ঠিকাদার সাংবাদিক বুকে প্রেস কার্ড ঝুলিয়ে টেন্ডার নিয়ে ঘরে ফ্রিজ ভরে, সেখানে শুধু চুনোপুঁটি ধরে কী লাভ হবে? রাঘববোয়ালরা তো এখনো ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে চা খাচ্ছে,অ্যাকশন কমিটিরই পৃষ্ঠপোষকতায়!
সভায় বলা হলো- ভুক্তভোগীরা যেন কল দেন খসরু ভাই, খালিদ ভাই, আজাদ ভাইদের নম্বরে। আচ্ছা, জনগণ এখন ফোন করবে সাংবাদিকদের চাঁদাবাজ ধরতে? কী অদ্ভুত পরিহাস! জনগণের হাতে ফোন, সাংবাদিকদের হাতে বুম, দুজনেই এখন একে অপরকে ধরে!
জুলাই আন্দোলনের পর মানুষ ভেবেছিল, বাকস্বাধীনতার হাওয়া ফিরবে।কিন্তু না, সরকার বদলেছে, চেয়ার বদলায়নি! প্রেসক্লাবের চেয়ারও আগের মতোই শক্ত, আগের মতোই চুপচাপ নতুন সাইনবোর্ড, পুরোনো ফ্যাসিবাদ! বদলেছে শুধু মুখোশ, তেল এখনো আগের বোতলেই আছে।
অতএব, বরিশালের অপসাংবাদিকতা ঠেকাতে হলে আগে ঠিকাদার সাংবাদিক” দপ্তর নির্ভর সাংবাদিক” আর “ফ্যাসিস্ট দোসর সাংবাদিকদের মুখোশ খুলতে হবে। না হলে প্রতিদিন একেকটা চাঁদাবাজ ধরা পড়বে, কিন্তু পরদিনই সে আবার নতুন ব্যাজ ঝুলিয়ে ফিরবে.. সাংবাদিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য হিসেবে!
তবে কী অপসাংবাদিকতাই সাংবাদিকতার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড? আর সত্য লিখতে গেলে বলে ভাই, আপনি ঝামেলায় যাবেন কেন? সামনে প্রেসক্লাবের ভোট!
© All rights reserved ©2022-2025 universalnews24.comDesign By Ahmed Jalal.
Leave a Reply